এখন তো ছেলের বউয়ের মুখের দিকে তাকতে পারছি না

সংসারের বড় ছেলে নাহিদ ১০ বছর বয়স থেকেই উপার্জনের সংগ্রাম শুরু তার। দোকানে কাজ করে বাবার হাতে তুলে দিতেন টাকা। সবশেষ একটি কুরিয়ার সার্ভিসে ডেলিভারি ম্যানের কাজ শুরু করেন। সেই কাজের সময় রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত হন নাহিদ। মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) দিনভর চলা সংঘর্ষের মাঝে পড়ে গুরুতর আহত হন নাহিদ। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।

এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে প্রবেশের পথে খালা রোকেয়া বেগমের কোলে মাথা লুকিয়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন লাল টুকটুকে ১৬ বছরের কিশোরী। হাতে তার এখনো লেগে আছে মেহেদীর রঙ। কিন্তু তার মনের রঙ কেড়ে নিয়েছে রাজধানীর নিউমার্কেটের সংঘর্ষ। অথচ আসছে ঈদে স্বামীর হাত ধরে ওই নিউমার্কেটেই যাওয়ার কথা ছিল তার। ওই নববধূ নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী-শিক্ষার্থী সংঘর্ষে নিহত নাহিদের স্ত্রী। শ্বশুরের সঙ্গে এসেছেন স্বামীর লাশ নিতে।

সন্তান হারানো পিতা নাদিমের সঙ্গে কথা হয় মর্গের সামনেই। তিনি বলেন, তিন ছেলের মধ্যে নাহিদ ছিল বড়। সে নিজেই ডালিয়াকে পছন্দ করেছিল। ছয় মাস আগে দুই পরিবারের সম্মতিতে তাদের বিয়ে করিয়ে দিই। এখন তো ছেলের বউয়ে মুখের দিকে তাকতে পারছি না। আমার ছেলেকে কেন ওরা মারলো। সে তো মারামারি করতে যায় নাই। বাসা থেকে বের হয়ে কাজে যাচ্ছিল। স্বামী হারানো ডালিয়া খালার কোলে মাথা দিয়ে তখনো বিলোপ করছিলেন, নাহিদ জানত না মারামারির কথা। আমরাও কেউ জানতাম না। জানলে কখনো ওকে কাজে যেতে দিতাম না। আমার সব শেষ হয়ে গেল। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।

ছেলের বিচার চেয়ে মামলা করবেন কি না? জানতে চাইলে নাদিম বলেন, এখন আমি কার নামে মামলা করব? কার কাছে বিচার চামু? এই দুঃখ কষ্ট কারে বলুম আমি? আর কিছু বলার কিছু নাই। তিনি জানান, তাদের বাড়ি কামরাঙ্গীরচর মধ্য রসুলপুর দেওয়ানবাড়ী এলাকায়। এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগনালে ডি-লিংক পার্শ্বেল কোম্পানিতে চাকরি করতেন নাহিদ। সকাল ৯টার দিকে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন কাজের উদ্দেশে। দুপুর থেকে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। বিকেলে ফেসবুকের মাধ্যমে তার আহত হওয়ার ছবি দেখতে পান তারা।

এর আগে, সোমবার রাত ১২টায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে এ সংঘর্ষ। এরপর রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলেও মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকে ফের দফায় দফায় শুরু হয় সংঘর্ষ। যা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অর্ধ শতাধিক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মাঝে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। আর সংঘর্ষের মাঝে পড়ে মারা যান নাহিদ।

Full Video


ভালো লাগলে শেয়ার করুন

এটা দেখেছেন কি? দেখে নিন